Tuesday, January 8, 2019

ছোটগল্প: অমর ভালোবাসা

আমার লেখা একটা ছোটগল্প...যা পড়ে হয়ত আপনিও মুগ্ধ হবেন।

"অমর ভালোবাসা"
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল

মাত্র ১৫ দিন হলো রনি কানাডায় গিয়েছে। এরকম ভাগ্য কতজনের হয়! ১৫ দিনের মাথায়ই ইউরোপের সিটিজেনশিপ তাও আবার এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। এদিকে মিথিলা অপেক্ষা করছে সাত দিন হলো রনির সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি।  আসলে সে হলো রনির গার্লফ্রেন্ড। ভালোবাসা যে কত গভীর আর ভালবাসার টান যে এত বেশি তা মূলত রনি আর মিথিলাকেই দেখলে বুঝা যায়। কিন্তু কানাডা যাবার পর থেকে সে মিথিলাকে তেমন পাত্তাই দিচ্ছে না। দেশ থেকেই মিথিলার কল আসলেই সে তার ব্যস্ততা আর কাজের চাপের বাহানা করে ফোন কেটে দেয়। কিন্তু সে তাতে বিন্দু পরিমানও রাগ করে না কারণ, সে ভাবতে থাকে হয়তো বিদেশে কাজের চাপে হয়তো সে তার সাথে এরকম আচরণ করছে।
সময় যত গড়াতে থাকে রনির আচরণও বদলাতে থাকে। দিনটি ছিলো বুধবার। বৃষ্টি হচ্ছিলো আর আকাশে মেঘের গুড়গুড় শব্দ। আসলে তার থেকে বড় ঝড় হচ্ছিল মিথিলার মনে। কারণ দীর্ঘ দুইমাস রনির কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে সে এমবি কিনিছে রনির সাথে ইমোতে কল করার জন্য কিন্তু রনিকে অনেকবার ফোন দেয়ার পর সে কল রিসিভ করে এমন ভাব দেখাল যেন সে জীবনের প্রথম মিথিলা নামটি শুনেছে!
মিথিলার সাথে কি হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছিল না।
তবে কি সে স্বপ্ন দেখছে? না!
এসব বাস্তবেই ঘটছে। কথা বলার এক পর্যায়ে রনি বলল, আমি আদৌ কোনদিন তোমাকে ভালোবাসিনি।
আর আপনিও আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।
আই হেট ইউ আই হেট ইউ...
বলতে বলতে রনি ফোন কেটে দিল। আসলে সে কি কানাডায় গিয়ে তার অতীতের সকল কথা ভুলে গিয়েছিল?
সে কি তবে সত্যিই আমার সাথে নাটক করেছিল। তবে কি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মিথিলা রাতে এক সেকেন্ডের জন্যেও ঘুমাতে পারেনি।
পরেরদিন সে রনির সব ছলনা বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে বলতে লাগল হে খোদা- আপনি রনিকে এমন কোন রোগ দিন যাতে সে আমার মতো আর কোনো মেয়ের সাথে  ভালোবাসা নিয়ে ছলনা করতে না পারে।
এর তিন দিন পর মিথিলা জানতে পারল যে, রনির ক্যান্সার হয়েছে। আর তাও আবার তার রক্তে। যারজন্য তার বেশিদিন বাঁচার কোন চান্স ই নেই।
মিথিলা খবরটি শুনে এত আনন্দিত হলো যে সে মনে মনে সুবহান আল্লাহ বলে খোদার কাছে শুকরিয়া আদায় করল। এবং সে ভাবতে লাগল সত্যি তার ভাগ্য অনেক ভালো। আল্লাহ যাই করেন ভালোর জন্যই করেন।
যদি রনির সাথে তার বিয়ে হতো তাহলে আজ আমার কি হতো ?
এসব কথা ভেবে সে নিজেকে খুবই আনন্দিত মনে করলো।
দুইমাস পর...
আজ মিথিলার বিয়ের ৭ দিন হয়ে গেছে। তার জামাই একজন সরকারী চাকুরীজীবী। অন্যদিনের তুলনায় তার স্বামী আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলেন। ফ্যাকাশে মুখে কি যেন চিন্তা করে অস্থির হয়ে আছেন মিথিলা স্বামী জহির। চিন্তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কলেজের বন্ধু রনি হাসান আজ সকালেই কানাডায় মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...
খবরটি শুনে মিথিলা মনে মনে  মুচকি হাসে। তারজন্য এটা তো দারুণ সুখবর।
সে ভাবে, আজ যদি সে রনির স্ত্রী হত তবে মাত্র কিছুদিনের মাথায় সে বিধবা হয়ে যেত।

একদিকে মিথিলা রনিকে ঘৃণা করে অন্যদিকে মিথিলার স্বামীর খুব ভালো বন্ধু ছিল রনি। একদিন রাতে কোন এক কথার জের ধরে মিথিলা তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা বলতো তোমার বন্ধু রনি কেমন স্বভাবের লোক ছিল আই মিন ওর আচার-আচরণ। যার জন্য তুমি আজও সব সময় ওর কথাই বলো এবং তার জন্য তুমি আজও কাঁদ।
জহির কেঁদে কেঁদে বলে, রনি ছেলেটা ছিল অতুলনীয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ থেকে শুরু করে কোন ইবাদতই সে ফাঁকি দিত না। সে খুবই সাদাসিধে এবং সরল টাইপের ছেলে ছিল। কখনোও মিথ্যা কথা বলতো না কিন্তু; একবার সে বাধ্য হয়েছিল মিথ্যা বলতে। সেটা ছিল একটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্কের কারণ। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। উন্নত জীবন এবং স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিতে সে কানাডায় পাড়ি জমায় কিন্তু সেখানে পৌঁছাবার মাত্র ৭ দিন পর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আর ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা আজো আবিষ্কার হয়নি তাই নিশ্চিত মৃত্যু বুঝতে পেরে ডাক্তারদের পরামর্শে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তাকে কানাডা সিটিজেনশিপ দেয়া হয়। বিষয়টি যখন রনি জানতে পারলো যে, সে আর বেশীদিন এই পৃথিবীতে নেই তাই ভাবলো একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট করে আমার কি লাভ?
তাছাড়া সে স্পষ্ট জেনে গেছে সে আর বেশীদিন সুন্দর পৃথিবীতে থাকবে না। আর সে এটাও বুঝে গেছে তার স্বপ্ন আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই যাকে সে তার জীবনের সবথেকে বেশি ভালোবাসতো সেই মেয়েটির সাথে সে এমন আচরণ করে, যাতে মেয়েটি তাকে ঘৃণা করে এবং চিরতরে তার জীবন থেকে চলে যায়। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিল এরকমটি করার জন্য।  তুমি কি তাকে ভুল বুঝে এবং তার জীবন থেকে চিরতরে চলে যায়।
রনির একটাই চাওয়া ছিল- সে যাকে পছন্দ করতো, ভালোবাসতো, সেই মানুষটি যেন সারাটি জীবন সুখ শান্তিতে থাকে। এসব শোনার পর মিথিলা অজ্ঞান হয়ে যায়। এবং যখন তার জ্ঞান ফিরে সে বুঝতে পারে তার অভিশাপের কারনে রনির ক্যান্সার হয় নি বরং; অভিশাপের মতো আচরণ করেই রনি তার জীবন থেকে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছিল না ফেরার দেশে...

No comments:

Post a Comment