Friday, August 9, 2019

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন: কাশ্মীর আবার খবরে/ কারণ, অর্থনীতি যে আজ কবরে 😭😭

Disclaimer 🙏🙏🙏,

                       প্রথমেই বলে রাখি, আমি নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে সবার সামনে আজ ইতিহাস এবং সত্যটাকে তুলে ধরছি। দয়া করে আমায় দেশদ্রোহী বা বেইমানের তকমা দেবেন না। আমি আপনার মতোই একজন শিক্ষিত ভারতীয় নাগরিক এবং প্রাণ দিয়ে দেশকে ভালবাসি। তবে মূর্খ হয়ে থেকে বা ভয়ের কারনে মুখ বুঁজে থেকে বিবেকের দংশনে ভুগতে চাই না । তাই এই নিবন্ধ ......

             কাশ্মীর আবার খবরে
       কারণ, অর্থনীতি যে আজ কবরে 😭😭

               কাশ্মীরকে বহু চর্চিত ৩৭০ ধারার মাধ্যমে অনেকেই জানেন। যে ধারা বিলোপ ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মুখ্য স্বপ্ন ছিল। পরবর্তীকালে ৬-৭ দশক ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (RSS) রাত দিন ৩৭০ ধারা বিলোপের কথা বলে এসেছে। কম বয়সে ছাত্রাবস্থায় স্বল্প জ্ঞানে মনে হতো, হয়ত এই ৩৭০ ই এই দেশের দুর্দশার মূল কারণ। বাকি কোন সমস্যাই ততটা গূঢ় নয়। আজ বেশ ভালোই বুঝি ৩৭০ হচ্ছে কেবল মাত্র একটি পাশার গুটি ! আর কিচ্ছু নয় !

              গতকাল সংসদে ঘোষণার পর থেকেই যারা গেল গেল রব তুলছেন, তাদের জন্য বলি, ৩৭০ ধারা বহুবার সংশোধনের পরে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে যেটাকে কপর্দক শূন্য সাবেকি জমিদার গিন্নির গহনার বাক্সের সাথে তুলনা করা যায়। যার মধ্যে একটা সময় অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল, কিন্তু এখন সব বেরিয়ে গিয়ে শুধু খালি বাক্সটা পরে আছে। সেটা নিয়েই রাজনীতির পসরা খুলে বসেছে সরকার। আর মাদারির ডমরুর তালে অন্ধভক্তি নিয়ে সাথে নেচে চলেছি আমরা ভক্তবৃন্দ।

কাশ্মীর সমস্যা আর ৩৭০ ধারা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব। তার আগে কিছু জিজ্ঞাসা,

        বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার  কি অস্বীকার করতে পারবে ?

১.   বাজপেয়িজীর ৭ বছরের শাসনে, কাশ্মীর ভ্যালিতে শান্তি ফিরতে শুরু করেছিল। কাশ্মীরে অনেক ইনস্টিটিউট তৈরি হয়। কর্ম সংস্থান হতে শুরু করে। রাস্তা ঘাটের নির্মাণ হয়। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয় এবং ধীরে ধীরে ৭ বছরে, মিলিটারির সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৮ হাজার থেকে ৬৫ হাজারে নামিয়ে আনেন বাজপেয়িজী।

২.     মনমোহন সিং চোখ বুঁজে বাজপেয়ি মডেলকে এগিয়ে নিয়ে যান। কাশ্মীরে বিকাশ এবং ভালোবাসার গতি অব্যাহত থাকে।  উগ্রবাদীদের উস্কানি হাতছানি উপেক্ষা করেও সাধারণ মানুষ মূল স্রোতে ফিরে আসতে শুরু করে । কাশ্মীর ভ্যালিতে মিলিটারির সংখ্যা নেমে আসে ৩৪ হাজারে।

৩.     উগ্রবাদী ছেড়ে দিন গত ৫ বছরে কাশ্মীরে বেশির ভাগ বাচ্চা ছেলে মেয়েরাও নিজেদের হাতে পাথর তুলে নিয়েছে। কাশ্মীর ভ্যালিতে কাজ কর্ম ব্যবসা সব ডুবে গেছে। ভ্যালিতে ৭ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করতে হয়েছে। ১০ জন সাধারণ কাশ্মীরি মানুষের পিছনে এক জন্য সৈন্য। তাও কিন্তু পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে।

      কেন এমন হলো ? আপনারা প্রশাসনে অক্ষম সেটাই কি এতে প্রমান হয় না ?

আমি ২০১০-২০১৩ পর্যন্ত, কাশ্মীরের কৃষি কমিটির মেম্বার ছিলাম। আমার কাশ্মীরে যাওয়াটা ছিল ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করবার মত ব্যাপার। আমি তো রাত বিরেতেও শ্রীনগরে ঘুরে বেড়িয়েছি। কোথাও তো সে সময় অশান্তি বা গাদা খানেক মিলিটারি ঘুরে বেড়াতে দেখিনি।

              আসলে হাতের উপরে স্থিত ছোট্ট ফোঁড়া চুলকে গত ৫ বছরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, কোনো আলোচনা ছাড়া এখন আপনারা হাতটাকেই এক ঝটকায় কেটে ফেললেন ! যে জখমের উপরে নিয়মিত স্নেহ ভালোবাসা আর সমর্থনের ওষুধ দিয়ে বাজপেয়িজী এবং মনমোহন সিং নিজেদের এক্তিয়ারে রাখতে অনেকটাই সমর্থ হন। হয়ত আপনাদের দ্বারা সম্প্রীতি রক্ষার সেকাজটি সম্ভব হয়নি, বা রাজনীতির স্বার্থে আপনারা চেয়েই ছিলেন কাশ্মীর উপত্যকার এমন খাস্তা হাল হোক। যেটাই হোক না কেন, মোদ্দা কথায় উপরিউক্ত দুটোই খুবই খারাপ।

এবার চলুন ইতিহাসে নজর রাখি,

                 আপনি কি জানেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার সময়ে কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ রাজ্য ছিল না ?? 

       তাহলে কাশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তি  হল কি ভাবে ?

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ১৯৪৭ সনে প্রথমে স্থির করেছিলেন তিনি স্বাধীন থাকবেন এবং সেই মোতাবেক ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতাবস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।

পাকিস্তান সে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল। কিন্তু জনজাতি এবং সাদা পোশাকের পাক সেনা যখন কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে, তখন তিনি ভারতের সাহায্য চান, যা শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি ঘটায়। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরদিন, ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭, গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন।

       জেনে নেয়া যাক, ৩৭০ ধারাটি কি ছিল ? আর তার তাৎপর্যই বা কি ?  কাশ্মীরে গণভোটের কথা কেন বার বার উঠে আসত ?

৩৭০ ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা ১০০ ভাগ কার্যকরী হয় না। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্য সরকারের অবশ্যই একমত হওয়া আবশ্যক।

১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই কোনো প্রিন্সলে স্টেটের ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়। ওই আইনে তিনটি সম্ভাবনার কথা রয়েছে:

    প্রথমত:  স্বাধীন দেশ হিসেবে থেকে যাওয়া

    দ্বিতীয়ত: ভারতের যোগদান

     অথবা: পাকিস্তানে যোগদান।

কী কী শর্তে এক রাষ্ট্রে যোগদান করা হবে, তা রাজ্যগুলি দাবী করে স্থির করতে পারত। যেটা জম্মু কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এখানে গা জোয়ারির কোন ব্যাপার ছিল না।অলিখিত চুক্তি ছিল, যোগদানের সময়কালীন প্রতিশ্রুতি রক্ষিত না হলে, দু পক্ষই নিজেদের পূর্বতন অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে।

"আপনারা জানেন কি অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্য এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করে সংবিধানের ৩৭১, ৩৭১A এবং ৩৭১L ধারার মাধ্যমে ??"

তাহলে সে সব রাজ্য নিয়ে কেন কোনোই উচ্চ বাচ্য নেই ? কারন, ওসব রাজ্যের সাথে 'পাকিস্তান' শব্দটা জড়িয়ে নেই যে । এদেশে আগেও পাকিস্তানের নামে তিন তিন বার ভোট হয়েছে। আপনারা নিজের চোখে দেখেছেন, এই বিগত লোকসভায়  পুলবামার দুঃখজনক উগ্রপন্থী আক্রমণ আর নিশানা ভ্রষ্ট বালাকোটের উপর ভর করে একটি সরকার ড্যাং ড্যাং করে সিংহাসনে ফিরল। অথচ সরকারি তথ্যই বলছে দেশের চাকুরীর অবস্থা গত চল্লিশ বছরের তলানিতে, শিল্পের উন্নয়ন থেমে গেছে, গ্রামীন অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পরেছে।

                      অন্ন নেই, বস্ত্র নেই 
                    চাকুরী নেই, অর্থ নেই
                 সস্তায় মোরা সুড়সুড়ি দেই

             স্বাধীনতার সাতটি দশক শেষে
          পুলবামা দিয়ে ভোট হয় যেই দেশে
              তারা ডুববেই যে ক্লেশে ক্লেশে

পাকিস্তানের নামেই আমরা সবাই ভাবুক হয়ে অতি দেশপ্রেমীর মত আচরন করি। অন্য দেশের বিরুদ্ধে খেলায় অতটা বিদ্বেষ থাকেনা, কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে  ক্রিকেট ম্যাচ এদেশে এক একটি মিনি  যুদ্ধের রূপ নেয়। অবশ্য পাকিস্তানে গিয়েও দেখেছি, ভারত বিদ্বেষ যেন ওদের মজ্জাগত রোগ। এই রোগাক্রান্ত অনুভবের ফায়দা লুটে দুটি দেশের রাজনৈতিক দল গুলো।

                  তাই কাশ্মীর আর ৩৭০ ধারা গত সাত দশক ধরেই শিরোনামে রয়েছে । অথচ ৩৭১ ধারার সুবিধাভোগী রাজ্যে গুলোর নামও হয়ত আমরা সবাই ঠিক করে বলতে পারব না। কিছু সত্য জেনে রাখুন। হরিণের মত চোখ বন্ধ করে রাখলেই সত্য চাপা পড়ে না, যেমন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না তেমনি:

১.    কাশ্মীরের বাইরের লোক কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবে না, এই আইন তৈরি হয়েছিল  কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবিতে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা হরি সিং এই আইন তৈরি করেন, জওহরলাল নেহেরু নয়।

২.          শুধু কাশ্মীর নয় নাগাল্যান্ড মিজোরাম অরুণাচল সিকিমসহ দেশের ১১ টি রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না।

৩.    পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশেই আদিবাসীদের জমি কেনা যায় না।

৪.    সিকিমে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট দখল দিতে পারে না। সিকিমে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি স্রেফ নথিভুক্ত কিছু ব্যাপারেই নাক গলাতে পারে। বাকি সব ব্যাপারে ওরা সার্বভৌম রাজ্য। 

৫.    জেনে রাখুন, বিশেষ সুবিধা ভোগী রাজ্য গুলোকে সুবিধা দেয়া হয় বিশেষ বিশেষ কারনে। সেটা দেশ চালাবার একটা স্ট্র্যাটেজি। দেশের অখন্ডতা ধরে রাখতে এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো আমি এখানে লিখতেও চাই না।

৬.    কর্ণাটক রাজ্যের নিজের পতাকা আছে। ওরা অলিখিত ভাবে স্কুল কলেজ পঞ্চায়েত অফিস সর্বত্রই ওদের লাল হলুদ পতাকা উত্তোলন করে। নিজেদের পতাকাকে অফিসিয়াল করবার জন্য ২০১৭ সনে সর্বসম্মতিক্রমে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আপনি কি মোদি সরকারের আগস্ট ৩, ২০১৫ এর নাগাল্যান্ড চুক্তি সম্পর্কে অবগত ? না হলে প্লিজ জেনে নিন, স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে কি কি পয়েন্ট আছে :

১. পৃথক নাগা আইন 

২. পৃথক নাগা পতাকা 

৩. নাগা মুদ্রার ব্যবহার

৪. শুধু নাগারাই রাজ্যে সরকারি চাকুরীর যোগ্য

                  অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি স্যার, নাগাল্যান্ড চুক্তির বর্ণনা শুনেও কি আপনি স্বর্গে এখনো শান্তিতেই শুয়ে আছেন ? এখনো কি আপনার মনে ৩৭০ এর বিদ্বেষ আপনাকে কুরে কুরে খায় ?

                 অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি স্যার, ৭০ বছর আগে সংসদে যখন ৩৭০ ধারার বিল সর্বসম্মতি ক্রমে পাস হয়, আপনিও তো দেশের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তাহলে তখন কেন সেই বিলের বিরোধিতা করেননি ? কারন তখনও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশাটা হয়ত কিছুটা হলেও বেঁচে ছিল। আমি এটাও জানি, আমার এই লেখাটি প্রকাশিত হলেই আজ Wikipedia তে আপনার প্রোফাইলে কিছু পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সংসদের নথি ভুল বলে না স্যার, আপনি ৩৭০ এর বিরুদ্ধে সংসদের বিতর্কে সেসময় একটি কথাও সেদিন বলেননি, সেটাই কিন্তু লেখা আছে !

নাহ, আপনার মত বিদ্বান মানুষ নিশ্চয় ভালোই জানতেন যে ছোট ছোট প্রিন্সলে স্টেট গুলোকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টায়,  ৩৭০ এর মত এই দেশের কয়েকটি রাজ্যে ৩৭১ ধারাও আসতে শুরু করেছে। আসলে ৩৭০ ধারা বিদ্বেষ কেবল মাত্র হিন্দুদের একত্রিত করবার একটি প্ল্যাটফর্ম মাত্র, যা ৩৭১ দিয়ে সম্ভব নয় !   

                   অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি স্যার শুনে রাখুন, এদেশের সাধারণ লোকেরা খেতে না পেয়ে খালি পেটে ঘুমায়, কারন ল্যাং মারার রাজনীতি দেশটাকে তো সর্বত ভাবেই  খেয়ে নিয়েছে। যে যাকে পারছে ল্যাং মারছে, যা এদেশে আপনিই প্রথম শুরু করেছিলেন ক্যাবিনেট মন্ত্রী থাকাকালীন। প্রচারপ্রেমী  আপনিও কিন্তু আপনার আজকের শিষ্যদের থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন না। সারা দেশকে কাশ্মীর আর বিশেষ করে কাশ্মীরি মুসলমান বিদ্বেষী করে তোলার সুনিপুন কর্মের সূত্রপাত আপনারই হাত দিয়ে। সেটাই খুব দুঃখের ব্যাপার।

শুনুন, কাজ করলে ত্রুটি থাকবেই। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশ গড়েছে, তারা ১৯৪৭ এর মুমূর্ষ দেশ আর অর্থনীতিকে দাড় করাবার কষ্টটা জানে। মনে রাখা খুব দরকার,  RSS কিন্তু এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশীদার হয়নি। ওরা বসে বসে মজা নিয়েছে। আমার জ্ঞান বর্ধনের জন্য, পারলে একজন শহীদের নাম বলবেন তো, যিনি RSS এর ছত্রছায়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন !

              সত্যি কথা বলতে কি, ভারতবাসী RSS এর নাম জানতে শুরু করে ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ সনে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর দিন থেকে !!

                তবে হ্যাঁ, রান্না ঘরে সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়ে গেলে অনেকেই পাত পেড়ে খেতে এসে খুঁত ধরে। ওরা বলতে লজ্জা পায়না, খাবারে লবন কম, কিংবা মাংসে ঝোলটা একটু বেশি, কিংবা ভাতটা আর একটু সেদ্ধ হতো । সমালোচক সে  RSS হোক কিংবা আজকালকার সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বোদ্ধা যোদ্ধারাই হোক না কেন ! সমালোচনা হচ্ছে সব চেয়ে সস্তা কাজ !

আমি মনে করি:

- জম্মু কাশ্মীরকে ভারতবর্ষে সংযুক্তিকরণের যে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, এবং বর্তমানে কাশ্মীরকে ঘিরে যে পরিস্থিতি, তার নিরিখে বলা যেতে পারে কাশ্মীরকে রাজ্য থেকে টুকরো করে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল তৈরির সিদ্ধান্ত দেশ এবং দশের  স্বার্থে নয় ।

- সংবিধানের ৩৭০ ধারার উপরে খাড়ার ঘা হেনে বহুলাংশে বিলুপ্তি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়নি। এটা একটা আধা মরা বাঘকে মেরে তার সাথে সেল্ফি নেয়ার মত তুচ্ছ ব্যাপার ছাড়া কিছুই নয়।

- এর আগেই ৩৭০ ধারার নানাবিধ ব্যবস্থাদি আইন সম্মত ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে লঘু করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে জম্মু কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের প্রেক্ষাপটে তাদের যে বিশেষ মর্যাদা ছিল সেটাকে খর্ব করে বা সেটাকে নিশ্চিহ্ন করে বর্তমান ঘোষণা শুধু মাত্র একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

- সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিজেপির রাজনৈতিক লাভ হয়তো হতে পারে, কিন্তু ভারতবর্ষের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে এটা মজবুত করবে না।

- জম্মু কাশ্মীরের স্পেশাল স্ট্যাটাসকে শেষ করার মধ্যে দিয়ে ভোট বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ হতে পারে। কিন্তু কোনওভাবেই ভারতবর্ষের জাতীয় সংহতিকে মজবুত করার কোনও প্রচেষ্টা কিন্তু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।

- সরকারের ভুলে এবার বেড়াল ঝুলি থেকে বেরিয়েই এলো। এখন ৩৭১ এর সুবিধে গুলো সবাই জানবে, এবং ধীরে ধীরে দেশে  ৩৭১ এর সুবিধাভোগী রাজ্য গুলোর বিরুদ্ধেও ক্রোধানল বাড়বে। উত্তরপূর্ব ভারতীয় রাজ্য গুলি থেকে আসা লোকেদের উপরে আঘাত বাড়বার যথেষ্টই সম্ভাবনা আছে।

- সার্বিক ভাবে বলতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেলিত করবে এবং যে অগণতান্ত্রিক অসংসদীয় পদ্ধতিতে এই গোটা প্রক্রিয়াটি কার্যত বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হলো সেটার ফল হিতে বিপরীত হতেই পারে।

  ---- স্কুলে সংস্কৃতর শিক্ষক শ্যামপন্ডিত বাবু বলতেন 'পন্ডিত্পি বরং শত্রু , ন মূর্খ হিত্কারক' -----

বিজ্ঞান গবেষণার সময়ে শিখেছিলাম অক্ষতিকর টিউমারকে অনর্থক খোঁচালে ক্ষতিকারক ক্যান্সারাস ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে পরিণত হতে পারে। পরবর্তীকালে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় জেনেছি, সেনসিটিভ ইস্যুকে বেগের পরিবর্তে আবেগ দিয়ে বশে আনতে হয়, বা চাণক্য নীতির হিসেবে "বুদ্ধি: জস্য বলং তস্য', সেটাই ঠিক । অবশ্য সাময়িক ভোটের রাজনীতির কথা ভাবলে, এই মাথা মোটা পদক্ষেপের চেয়ে ভালো আর কিছু হতেই পারে না।

                "বিশ্বের নজরে আজ ভারতের অঙ্গ রাজ্য কাশ্মীরকে অনর্থক একটি মিলিটারি অকুপায়েড টেরিটোরিতে পরিণত করা হলো। যেটার আপাততঃ কোনোই দরকার ছিল না "

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতে অন্তর্ভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল কতগুলো নির্দিষ্ট শর্তের বিনিময়ে।তার অন্যতম শর্ত ছিল ৩৭০ ধারা। চুক্তি মোতাবেক স্থির হয়েছিল চুক্তির শর্তগুলো বিলুপ্ত হলে চুক্তিরও বৈধতা থাকবে না ..... .....

          তাই কিছু হিং টিং ছট মাথার মধ্যে কামড়ায় :

- কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত আইনসম্মত কিনা এবং তা সাংবিধানিক ভিত্তিতে স্থিরীকৃত হয়েছে কি না ? এটা ভবিষ্যতে বুমেরাং না হয় !

- যে ভাবে জম্মু কাশ্মীরের বিধানসভার পরিবর্তে রাজ্যপালের সুপারিশক্রমে এটা করা হল, সেটা আইনগত দিক থেকে ঠিক হলো কি না ? 

- ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির অর্থ কাশ্মীরের ভারতভুক্তি চুক্তিরও বিলোপ ঘটবে কি না ?

- জাতিপুঞ্জ ইচ্ছা করলে এখন কাশ্মীরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে কি না ?

- কাশ্মীর নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সেটা আইনগত ভাবে অবৈধ হবে, কি না ?

তবে এত টুকু জানি, ভারত গণরাজ্য থেকে কাশ্মীরকে বের করে আনতে দীর্ঘদিন ধরে যে চেষ্টা হিজবুল লস্কর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা করে আসছিলেন, সংবিধানগত ভাবে দেশ থেকে কাশ্মীরকে এক ঝটকায় কোণঠাসা করে তাদেরই সাহায্য করল এই সরকার । কাশ্মীরের জনগণকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা মনে হয়না আর সম্ভব। আজ নিশ্চয় স্বর্গীয় বাজপেয়িজী হাপুস নয়নে কাঁদছেন।

       আবার দেখুন,  কি আশ্চর্য, যে এলাকা এতটা সেনসিটিভ, তার দায়িত্ব নাকি থাকবে ঠুনকো পঙ্গু ক্ষমতাহীন বিধানসভা আর এক লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে। মানে, রাজ্যপালের পদটাও উবে গেছে !!

বেশ মনে আছে, নোট বন্দি ঘোষণার পরের দিন কন্সটিটিউশন ক্লাবে দেয়া আমার ভাষণ অনেকের কাছে JNU এর প্রতিবাদীর ভাষার মত মনে হলেও, আজ চরম মূর্খও হয়ত মানবে, ভারতের অর্থনীতিতে অসময়ে এত বড় হটকারী পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হয়নি। যার ধাক্কা প্রতি মুহূর্তে আজো অনুভূত হয়।

আর আজ যেটা হলো, সেটার ভবিষ্যতবাণী করবার মতো বিজ্ঞ ব্যক্তি আমি নই। কিন্তু এতটা বুঝি,

       " চোখের সামনে আজ আরো একটি  প্যালেস্টাইন সৃষ্টি হলো বলেই মনে হয়। যার সুদূর প্রসারি কুফল এদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম না ভুগলেই ভালো" 

মনে রাখতে হবে সরকারের এই আকস্মিক পদক্ষেপ জম্মু কাশ্মীর সংযুক্তিকরণের ঘোষণাপত্র 'Instrument of Accession' এর সম্পূর্ন ভাবে পরিপন্থী।  সরকারের পদক্ষেপ শুধুমাত্র ঐতিহাসিক দিক দিয়ে ভুল তাই নয়, রাজনৈতিক দিক দিয়েও  বিভ্রান্তিমূলক। জম্মু কাশ্মীর ভারতবর্ষের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গা জোয়ারি না করে, অন্যান্য বিভিন্ন রাজ্যের জন্য সংবিধানের ৩৭১ ধারায় যে সমস্ত ব্যবস্থাদি রয়েছে সেই ব্যবস্থাদির নিরিখেই ৩৭০ ধারার প্রয়োজনীয়তার জায়গাটি দেখা যেতে পারত বা এখনো দেখতে পারা যায় ।

                তাও বলি, অন্তরসারহীন ৩৭০ এর বেশির ভাগ অংশ অবলুপ্ত হলো, জম্মু কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলো, এগুলো সব ঠিক আছে। কাল সকালে উঠে এটা শুনলেও আশ্চর্য হবেন না, যদি রাতারাতি জম্মুর নাম যমুনা নগর, কাশ্মীরের নাম কাশিপুরম, আর লাদাখের নাম লক্ষণপুর করে দেয়া হয়। সেটাও কিন্তু ঠিক আছে ......

       কিন্তু আমার মূল ভয় শঙ্কাটা অন্যখানে !!!

১.       যে ভাবে সংসদে আলোচনা ছাড়াই সকাল ১১ টায় সীমিত শব্দে সরকারের পদক্ষেপের তথ্য দিয়েই দায় সারা হয়, সংবিধান বা সংসদের আর কিছু গরিমা রইল কি ?

২. সংসদে ঘোষণার  ১ ঘন্টার মধ্যেই মহামহিম রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর সহ নোটিশ লোকের হাতে পৌঁছায়। ভয় হয়, রাষ্ট্রপতি কার্যালয় আর প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ে কিছু আর তফাৎ বাকি আছে কি না।

৩.    ভয় হয়, RSS এর অতীতেও তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা অবমাননার ইতিহাস আছে। কে জানে, সংবিধানের গরিমা নষ্ট করাও একটা স্ট্র্যাটেজি কি না ! হয়ত আজ থেকেই তার সূত্রপাত হলো।

৪.  কাল এভাবেই কি অন্য রাজ্যের উপরে খাড়ার ঘা নেমে আসতে পারে ? খুব আশ্চর্য হব না, যদি একদিন সকালে উঠে শুনতে পাই বাংলা ভেঙে দু ভাগ হয়েছে। আজ থেকে দার্জিলিং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল বলে পরিগণিত হলো, এমন একটা খবর মিডিয়াতে উঠে আসে।

এ দেশ সেক্যুলারিজম বিসর্জন দিয়ে যে ধীরে ধীরে হিন্দু রাষ্ট্র  হতে যাচ্ছে, সেটা চরম ছাগলেরও জানা আছে। সুপ্রীমকোর্টকে কাচকলা দেখিয়ে যে এবছরের মধ্যেই রাম মন্দিরের নামে অধ্যাদেশ আসবে, সেটাও সবার জানা।   আন্তর্জাতিক স্তরে ধর্মীয় রাষ্ট্র গুলো বিকাশের যুগে অনেক পিছিয়ে পড়ছে জেনেও আমরা আমাদের সুপ্ত হিন্দুত্বর এজেন্ডা থেকে এক চুলও সরব না। গোল্লায় যাক দেশটা, যাক না।

পরিশেষে,

মনে রাখবেন ১৯৮৪ এর নির্বাচনে কংগ্রেস ৪০৭ টি সিট পেয়েও ১৯৮৯ তে ধসে গেছিল অরুণ নেহেরুর মত ক্ষমতালোভীর বাড় বারন্তের কারনে। খুব কাছ থেকে জানার সুবাদে , আমি অরুণ নেহেরুর চেহারা, ক্রুরতা, অহংকার আর ক্ষমতা লিপ্সার সাথে আজকের দিনে কার যেন ভীষণ মিল খুঁজে পাই !

             গণতন্ত্রের মার থেকে আজ পর্যন্ত কেউ পার পায়নি !! বাকিটা ভবিষ্যত বলবে ...
         মিনহাজউদ্দিন মন্ডল

No comments:

Post a Comment