Sunday, July 7, 2019

একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা://বাস আর একটি হত্যা (জীবন হতে নেয়া)//

      মিনহাজউদ্দিন মন্ডল

গল্প লেখার জন্য জীবনের পথে ঘাটে আমি চোখ খুলে রাখি! কিন্তু বাস্তবতার ধাক্কার ঢেউ আমাকে অন্ধ করে দেয়!
একটি লোকাল বাস!
 ভাত ছিটানো কাকের পালের মতোন, সন্ধ্যায় চাকরিজীবীদের বাড়ি ফেরার ভীড়!
অর্ধেক মেয়ে, অর্ধেক ছেলে!
অসহায় বোন, মা, ভাই, বাবা!

তারপর, ছুঁটে আসছে, লোকাল বাস!
ভীড়ের মধ্যে গোপন, লজ্জার কথা আজ বলবো না! আজকে যে কান্নার দিন!
একটা বাস যাচ্ছে, ছুঁটে চলছে মানুষ বস্তা ভরা করে!
আরেকটা আসছে! উঠছে, বোন, মা, আপারা! গন্তব্য স্থীর তবে সঠিক ঠিকানায়। 
চট্টগ্রাম শহরের রাস্তায়,  ১ নং হতে ১০নং পর্যন্ত লোকাল বাস চলে বিভিন্ন রুটে,  বাস সার্ভিস জনসেবারই মতোন।
সেদিন,  মা ও শিশু হাসপাতাল এর ডাক্তার পরিচিত আছে কিনা জানতে চায় বন্ধু বরুন, নাম্বার ও নাম লিখে দেই পরিচিত ডাক্তারের। রাতে বরুন ফোন করে হাসপাতালে আছে, এক গর্ভবতী বোনকে ভর্তি করিয়ে।
ডাক্তার আল্টাসোনোগ্রাফ করে বলে দিয়েছে, যে বোনটির গর্ভে বাচ্চা আর জীবিত নেই!
বন্ধু বরুন,  ডাক্তারের কাছে জেনে নিয়েছে মেয়েটিকে বাঁচানোর ব্যবস্থাপত্র!
চার পাঁচদিন পর হঠাৎ বরুন আসে আমার অফিসে। একটু বিষণ্ণ ভাব তার চেহারায়। আমি বললাম কিরে তোর বোনের কি অবস্থা? বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারল না কেন? বরুন বলল, আঘাতটি প্রচন্ড ছিল, আর ডেলিভারি সময় ছিল মাত্র কুড়ি দিন বাকি!
একটু অবাক হয়ে বললাম, কি! আঘাত? কিভাবে? কোথায়?
বরুন চোখ মুছতে মুছতে, বলল, অফিস হতে ফিরতে লোকাল বাসে উঠে। প্রচন্ড ভীড় ছিল সেদিন। তারপরও বাস থেমে থেমে লোক তুলে, নামিয়ে চলছিল। বিনি দাঁড়ানো ছিল, হঠাৎ বাসের ড্রাইভার প্রচন্ড গতি থাকা অবস্থায় ব্রেক কষে! বিনি তাল হারিয়ে সিটের সাথে বাড়ি খায়! চিৎকার করে উঠে। বাসের মধ্যে লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতাল নিয়ে আসে!
চোখের কোনে জল লুকাতে লুকাতে বরুন বলল সব স্বপ্ন শেষ বোনটির!
চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ, মাথায় ভাবনার গাড়ি দৌড়াচ্ছে! এটা কি মার্ডার কেস নয়? এটা যদি আমেরিকা বা জাপানে ঘটতো তাহলে কি বিচার হতো?
কবে শেষ হবে এই অসভ্যতার মুখোশ।
বাস দায়ি! সার্ভিস দায়ি, সিস্টেম দায়ি! যে শিশুটি পৃথিবীর বুকে আসার আগেই হত্যার শিকার হলো এর জন্য কি আমরা সবাই দায়ি নই? হে শিশু আমাদের ক্ষমা করো!!

No comments:

Post a Comment