Sunday, July 7, 2019

মূল্যবান তথ্য: //Blood Pressure (রক্তচাপ)//

    "সাধারণত রক্তচাপ" বলতে সিস্টেমিক প্রবাহের ধমনিক প্রবাহকে বোঝায়। প্রতিটি হৃৎস্পন্দনের সময় একবার সর্বোচ্চ চাপ (সিস্টোলিক) এবং সর্বনিম্ন চাপ (ডায়াস্টলিক) হয়। মূলত হৎপিন্ডের সংকোচন প্রবণতাই রক্তচাপের প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানুষ বেশিরভাগ সময়ই ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। তবে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেই কিন্তু এটা কমানো সম্ভব। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে; যা সব রক্তচাপকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমানোর ৭ উপায় জানিয়ে দিচ্ছে হেলথ.কম:
ব্যায়াম করুন
ব্লাড প্রেসার কমানোর একটি কার্যকারী উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই এক সপ্তাহ পর ব্লাড প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এজন্য হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর মতো আরও অনেক কাজ করতে পারেন আপনি।
কলা খান
পটাসিয়ামের প্রধান উৎসই হচ্ছে কলা। তাই রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন কলা খান। এছাড়া অন্যান্য যেসব খাবারে পটাসিয়াম রয়েছে যেমন- আলু, কমলা লেবুর জুস এবং দই ইত্যাদি খাবারও খাওয়ার চেষ্টা করুন।
লবণ কম খান
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে লবণ কম খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের দিনে ১৫শ মিলিগ্রামেরও কম লবণ খাওয়া উচিত।
ধুমপান এড়িয়ে চলুন
ধুমপায়ীদের সবচেয়ে বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাচঁতে চাইলে তা এড়িয়ে চলুন।
ওজন কমান
অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম একটি কারণ। তাই এটি নিয়ন্ত্রণের ওজন কমিয়ে ফেলুন। শুধু রক্তচাপ নয়, অতিরিক্ত ওজন হার্টের কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করে। তাই এটি কমিয়ে ফেলাই ভালো।
অ্যালকোহলের মাত্রা কমানো
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে অ্যালকোহলের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। গবেষণা দেখা গেছে, দিনে ২ প্যাকের বেশি অ্যালকোহল পান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
ধ্যান বা মেডিটেশন
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে প্রার্থনা, ধ্যান বা মেডিটেশন করলে ব্লাড প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়া নিয়ম করে যোগ ব্যায়াম করলেও ব্লাড প্রেসার কমানো সম্ভব।



হাই ব্লাড প্রেশার হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নামেও পরিচিত। এই কন্ডিশন তখনি সৃষ্টি হয় যখন আর্টারিতে রক্তের অনেক প্রেশার থাকে। একজন ব্যক্তির ব্লাড প্রেশার রিডিং যখন ১৪০/৯০ mm Hg বা এর চেয়েও বেশি হয় তখন বলা হয় হাইপারটেনশন। একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়ে থাকে। কেননা যদি সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হয় তাহলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এমনকি কিডনি ফেইলিওর-ও হতে পারে কিন্তু লক্ষণীয় কোন সিম্পটম্প দেখা যাবে না।
হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ
বর্তমানে এমন কোন একটি বাসা পাওয়া যাবে না যেখানে কোন একজন হাইপারটেনশনের রোগী নেই। প্রেশার হুটহাট বেড়ে যেতে পারে। সবার সিম্পটম এক না তবুও কমন কিছু সিম্পটম হলঃ
১) প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা
২) ঘাড় ব্যথা করা
৩) বমি বমি ভাব হওয়া; এমনকি বমিও হয়ে যাওয়া।
৪) নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
যদিও ডাক্তার বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তবুও খুব সিম্পল কিছু ন্যাচারাল উপাদান দ্বারা হাই ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল করতে পারেন। এইসব উপাদান গুলো কিচেন ইনগ্রেডিয়েন্স নামে পরিচিত, কেননা এসব উপাদান আমরা আমাদের কিচেন কেবিনেটই পেয়ে থাকি।
হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের কিছু কারণ
১) প্রতিদিন ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া।
২) অ্যালকোহল গ্রহণ করা।
৩) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য /পানীয় থাকা।
৪) নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে না তোলা।
৫) স্ট্রেস
৬) অবেসিটি, যেহেতু হার্টকে অতিরিক্ত টিস্যুর জন্য বেশি বেশি ব্লাড পাম্প করা লাগে।
৭) বংশগতভাবে অনেকেয় হাই ব্লাড প্রেশারের শিকার হয়ে থাকে।
চলুন এবার জানা যাক কোন উপাদান কীভাবে ব্যবহার করবেন হাইপারটেনশন মোকাবেলা করার জন্য-
হাই ব্লাড প্রেশার মকাবেলার উপায়
১) কলা
কলা এমন একটি ফল যা ব্লাড প্রেশারের রোগীরা প্রেশার কন্ট্রোল করার জন্য প্রতিদিন খেতে পারেন। কলাতে থাকা পটাসিয়াম প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একই সাথে কলাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম উপরন্তু কোলেস্টেরল ফ্রি। হাইপারটেনশনের পাঠকেরা আপনারা প্রতিদিন একটি করে কলা খেতে পারেন।
২) রসুন
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে এক স্টাডিতে পাওয়া গিয়েছে যে রসুন প্রেশারের রোগীদের জন্য ওষুধ স্বরূপ কাজ করে, কারণ এটি প্রাকৃতিক ভাবেই কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় তাই প্রেশারও কমে যায়। চিবানো রসুন হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি করে, যা ব্লাড ফ্লো সঠিক রাখে, গ্যাস দূর করে এবং হার্টের উপর থেকে প্রেশার কমিয়ে আনে। প্রতিদিন রান্না অথবা কাঁচা এক কোয়া রসুন আপনার জন্য যথেষ্ট।
৩) কাঁচা বাদাম
কাঁচা বাদাম মানে যে বাদামটি বালুতে ভাঁজা হয়নি। প্রতিদিন ৪-৫ টি কাঁচা বাদাম আপনাকে রাখবে প্রেশার থেকে কয়েকশ হাত দূরে। কাঁচা বাদামে আছে mono-saturated ফ্যাট। প্রমাণিত হয়েছে এই ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে সেই সঙ্গে arterial inflammation ও কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে আপনি থাকেন লোয়ার ব্লাড প্রেসার লেভেলের আওতায়।
৪) ডাবের পানি
ডাবের পানিতে আছে পটাশিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইট এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েণ্ট। কিছুদিন আগে West Indian Medical Journal এ পাবলিশ হওয়া একটি স্টাডিতে দেখা গেছে স্টাডিতে অংশ নেয়া ৭১% সিসষ্টলিক প্রেশার কমে গিয়েছিল আর ২৯ জনের ডায়াষ্টলিক প্রেশার কমে গিয়েছিলো নিয়মিত ডাবের পানি পান করার কারণে।
৫) হলুদ
অনেকেই হয়ত জানি না এর আরেক নাম কারকিউমিন। এর অনেক গুলো গুণের মধ্যে একটি হল এটি সারা শরীরের ইনফ্লামেসন দূর করে। ইনফ্লামাসনের প্রাথমিক কারণ হিসেবে হাই কোলেস্টেরল এমনকি হাই ব্লাড প্রেশারকে দায়ি করা হয়। হলুদ ব্লাড ভেসেল শিথিল করে। এটি ব্লাড থিনার-ও, যা হাইপারটেনশনের সাথে ফাইট করার আরেকটি শক্তিশালী হার্ব।
৬) ডার্ক চকলেট
প্রতিদিন অল্প অল্প ডার্ক চকলেট খান আর হাই ব্লাড প্রেশার থেকে দূরে থাকুন। আরেকটি সুখবর হল ডার্ক চকলেট খেলে মোটা হওয়ার কোন ভয় নেই। এই চকলেটে আছে কোকো আর কোকোতে থাকা পলিফেনলস প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখবেন পরিমাণ যেন খুবই কম হয়।
৭) কালোজিরা
কালজিরার তেলে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো কোলেস্টেরল আর ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিদিন এক চা চামচ করে কালোজিরার তেল খান। যদি এই তেল খেতে আপনার খারাপ লাগে তাহলে জুস অথবা চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
৮) লেবুর রস
হাইপারটেনশনের কন্ট্রোলের জন্য নিয়মিত লেবুর রস পানের অভ্যাস করুন। লেবু ব্লাড ভেসেল নরম করে এবং তাদের রিজিডিটি দূর করে। ফলে হাই ব্লাড প্রেশার কমে যায়। উপরন্তু লেবুতে থাকা ভিটামিন বি এর জন্য হার্ট ফেলুয়ার এর চান্স কমে যায়। যাদের হাই ব্লাড প্রেশার আছে তারা দিনে কয়েকবার লেবুর পানি পান করবেন।
৯) পেঁয়াজের রস
প্রতিদিন একটি মাঝারি সাইজের কাঁচা পেঁয়াজ খান। এটি নার্ভাস সিস্টেমের জন্য টনিকের মত কাজ করে। এটি রক্ত পরিষ্কার করে, হার্টের কার্যকারিতা রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে প্রেশার কমিয়ে দেয়।
১০) হারবাল ওষুধ
১) ১০০ গ্রাম তরমুজের বিচির গুঁড়োর সাথে ১০০ গ্রাম পোস্ত দানা মিশিয়ে কোন একটি কন্টেইনারে ভরে রাখুন। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় পানির সাথে এক চা চামচ করে খাবেন। দেখবেন অনেকটাই স্বস্তি পাচ্ছেন।
২) ২০-৩০ টি কারি পাতা ১ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খান। চাইলে এর সাথে লেবুর রস মিশাতে পারেন। একই ভাবে ধনে পাতা বা মেথি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।
৩) এক চা চামচ মধু, এক চা চামচ ধনে গুঁড়োর সাথে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে ডেইলি ২ বার করে খাবেন।
৪) চার চা চামচ পানির সাথে ৪-৫ ফোঁটা রসুনের রস মিশিয়ে একটি সলিউসন বানান এবং প্রতিদিন ২ বার করে পান করুন।
৫) হাফ চা চামচ মধু আর পেঁয়াজের রস প্রতিদিন ২ বার করে খান। এভাবে ১-২ সপ্তাহ খেলেই সাস্থ্যের অনেক উন্নতি দেখতে পারবেন।
৬) দারুচিনি মোটামুটি সবার কাছেই প্রিয় মসলা। ৩ টুকরা দারুচিনির স্টিক গুঁড়া করে নিন তারপর এই গুঁড়া ১ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। এর সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন চায়ের মত পান করুন।
হাই ব্লাড প্রেশার কমিয়ে আনতে ১টি পানীয় রেসিপি
আর্টিকেলটি শেষ করবো একটি পানীয় এর রেসিপি দেয়ার মাধমে। এই স্মুদি ৬ ঘণ্টার মধ্যে আপনার প্রেশার কমিয়ে আনবে। বিটে আছে ডাইটারি নাইট্রেট, যেটিকে আপনার শরীর একটি গ্যাসে রূপান্তরিত করে, আর আপনার ব্লাড ভেসেল প্রশস্ত হয়ে রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে। যেহেতু প্রেশার কমানোর সব ধরনের উপকরণ একসাথে দিয়ে এই পানীয় তৈরি করা হচ্ছে সেহেতু এরা একসাথে আপনার বডিতে কাজ করে আর আপনি কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বস্তি পেতে পারেন। তবে সতর্কতার জন্য বলছি,
ডায়াবেটিসের রোগীদের ভেবে চিন্তে সেবন করবেন। যদিও এতে ডিরেক্ট কোন সুগার নেই কিন্তু উপাদান গুলোর মধ্যে কিছু সুগার আছে আর খালি বা ভরা পেটে খাওয়ার কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই।
১/২ সেদ্ধ করা বিট রুট, ১ ১/২ ঠাণ্ডা আনারসের টুকরা, ১/২ কাপ কমলার রস, ১ কাপ ঠাণ্ডা দুধ, ৪-৫ টি বাদাম, ১/৪ সেলেরি (যদি হাতের কাছে থাকে)।
সব একসাথে ব্লেণ্ড করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পান করুন। এটি পান করার কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার প্রেশার কমা শুরু করবে।

No comments:

Post a Comment