Saturday, December 14, 2019

ইতিহাসের পাতায় নরেন্দ্র মোদী>>> মিনহাজউদ্দিন মন্ডল

মহামহিম মোদী নিঃসন্দেহে ইতিহাসে নাম তুলে ফেলেছেন। আজ থেকে পাঁচশো বছর পরে, স্কুল-বইয়ে নিশ্চয়ই লেখা হবে, ভারতবর্ষে এমন একজন মহাসম্রাট এসেছিলেন, যিনি কাশ্মীরে টিভি সম্প্রচার বন্ধ করে কাশ্মীরিদের উদ্দেশে টিভিতে ভাষণ দিতেন। যিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতবাসীকে টুইট করতেন। যিনি বাংলায় দশ কোটি লোককে রাষ্ট্রহীন করার কল বানিয়ে, তারপর তাদেরই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি  নষ্ট না করার উপদেশ দিতেন।

তিনিই ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পাকিস্তানকে মেরে ফেলব বলে হুঙ্কার দিয়ে নিজের দেশেই সৈন্য নামিয়েছিলেন। যুদ্ধ করছি, বলে পাকিস্তানে একটি কাক এবং  অনেক পাইনগাছ মেরেছিলেন। তিনিই ভারতের একমাত্র দেশনেতা, যিনি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দুইয়ের কাছ থেকেই জুতোর বাড়ি খেয়ে তারপরেও নতুন সুট পরে জগৎ-সভায়-শ্রেষ্ঠ-আসন-লভেছি ধরণের হাসি হাসি পোজে ছবি দিতেন। এবং তিনিই একবিংশ শতকে পৃথিবীর একমাত্র সম্রাট যিনি, স্রেফ খেয়াল হয়েছিল বলে, এক রাতে নিজেরই সমস্ত নোট বাতিল করে দিয়ে আপামর দেশবাসীকে পাক্কা বছর খানেক ধরে দৌড় করিয়ে প্রচুর ফুর্তি পেয়েছিলেন।

তিনি দেশবাসীকে মিত্র বলতেন, আম্বানিকে স্যার। তিনি ব্যাঙ্কের টাকা দিতেন চোরদের, আর আমানতকারীরা যাতে নিজের টাকা সহজে না তুলতে পারে, তার সুবন্দোবস্তো করতেন। ইতিহাস বলতে তিনি রমায়ণ বুঝতেন। বিজ্ঞান বলতে রামদেব। আর অর্থনীতি জিনিসটিকে স্রেফ তুলে দিয়েছিলেন। গরীবি হটানোর জন্য তাঁর অব্যর্থ দাওয়াই ছিল দুই খানা। ১। গরীবির সংখ্যা চেপে দাও। খবর না থাকলে আর কীসের গরীবি। চোখ বুজে থাকলেই প্রলয় বন্ধ থাকবে। এইভাবে তিনি বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে ভুল প্রমাণ করেন ( যিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রে খবর্সহজে  চেপে দেওয়া যায়না)। ২। লোককে অ-নাগরিক বানিয়ে দাও। যারা নাগরিকই নয়, তাদের আবার কীসের সমস্যা। মাথাই না থাকলে কীসের মাথাব্যথা। লোকগুলো তখন ল্যাল্যা করে ঘুরবে, নাগরিকত্ব পেলেই মোক্ষলাভ করবে, তাদের অন্য কিছুর দাবীদাওয়া থাকবেনা। এই অনুপম পদ্ধতি তিনি প্রয়োগ করেন প্রথমে আসামে, তারপর বাংলায়। সেখানে একদল বলতে থাকে অহা মোল্লাদের নাগরিকত্ব থাকবেনা, কী আনন্দ। আরেকদল বলতে থাকে বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়া চলবেনা। এই নিয়ে প্রচুর কাটাকাটি চলতে থাকে, এবং ফাঁকতালে তিনি সবকটাকেই লাথিয়ে তাড়িয়ে দেন। দেশে ভোটারই না থাকায় তাঁর পুনর্নিবাচিত হতে কোনো অসুবিধেই হয়নি। এই ফাঁকে আস্ত পূর্ব ভারতকেই বানিয়ে ফেলেন ডিটেনশন ক্যাম্প । গুজরাতি বানিয়ারা সেখানে চিরস্থায়ী রাজত্ব করতে থাকে। আর হিন্দু এবং মুসলমান বাঙালি প্রজারা সেখানে নিজের-নিজের হাত কামড়াতে কামড়াতে জীবন কাটাতে থাকে।

তবে এখানেই শেষ নয়। পাঁচশো বছর পরে, নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষায় একটা নতুন শব্দ যোগ হবে। মদীয়। যা 'তুঘলকী'র প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। লোকে পড়ে হ্যাহ্যা করে হাসবে। এবং স্কুলের পাঠ্য বইয়ের শেষ লাইনে, মোক্ষম ভাবেই লেখা থাকবেঃ তারপর একদিন প্রজারা তাঁর হাত থেকে এবং তিনি প্রজাদের হাত থেকে বাঁচলেন।

এই অবধি পড়ে, কোনো কচি খোকা বা খুকি অবশ্য প্রশ্ন করতে পারে, উনি পাগল ছিলেন বোঝা যায়, কিন্তু আস্ত ১৩০ কোটিই কি পাগল ছিল? জবাবে মাস্টারনি উত্তরহীন থাকবেন কিনা সেটা এখনও বলা যাচ্ছেনা।

No comments:

Post a Comment