Tuesday, December 10, 2019

ডিপ্রেশন কি শুধু প্রেমিক/প্রেমিকা ছেড়ে গেলেই হয়? নাকি আরও কারণ আছে ডিপ্রেশনের পিছনে?

         --- মিনহাজউদ্দিন মন্ডল

বিচ্ছেদ ছাড়াও অনেক অনেক কারণেই মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বাবা মায়ের ঝগড়া, পারিবারিক ঝামেলা, খারাপ রেজাল্ট করা, বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়া, পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পাওয়া, পছন্দের সাবজেক্টে চান্স পেয়েও ভর্তি হওয়ার জন্য পরিবারের সাপোর্ট না পাওয়া, বন্ধু বান্ধব থেকে তিরস্কার হওয়া, গায়ের রং কিংবা ওজনের জন্য সব সময় হাসির পাত্র হওয়া এরকম যেকোনো কারণেই মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে।

কিংবা এমন অনেক কারণেই মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে যেটা আপনার আমার কাছে কোনো কারণ ই মনে হবে না। আপনি শুনে হাসবেন। তাকে পঁচাবেন। 'ধূর ব্যাটা' বলে তার কষ্টের কথা হেসে উড়িয়ে দিবেন।

আমার সাথে কথা হয়েছে এমন দুই-একজনের কথা বলি। রুপালি ( ছদ্মনাম)। ছোটবেলায় পাশের বাসার এক আন্টি তাকে দেখলেই বলতো, কিরে Hoe কেমন আছিস? এই Hoe কি করিস? সে ছোট মানুষ। Hoe মানে বুঝতো না। প্রতিনিয়ত আন্টি তাকে hoe ডাকতো। একটু বড় হবার পর সে জানলো Hoe মানে বেশ্যা! তাহলে কি দাঁড়ায়? তার আন্টি তাকে ডাকতো, "কিরে বেশ্যা, কেমন আছিস? কি খবর তোর?" চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন আপনাকে কেউ এভাবে ডাকছে। আপনি তাকে কি করতেন?

সে এটা নিয়ে ভাবতে থাকে। মন খারাপ করে পড়ে থাকে। বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিশা বন্ধ করে দেয়। নিজেকে খারাপ মনে হতে থাকে। ইনফিরিয়র কমপ্লেক্সিটি তে ভুগতে থাকে। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেয় এর প্রতিশোধ সে নিবেই। সে নিয়েছেও। কাহিনী আগেও বলেছিলাম।

মেয়েটা এখন বর্ডারলাইন পারসোনালিটি  ডিসঅর্ডার এর রোগী। দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসা নিচ্ছে। তিন দিন আগেও asylum (আশ্রয়কেন্দ্র/ মানসিক রোগীদের যেখানে চিকিৎসা করা হয়) থেকে এসেছে। সেখানে তার একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। তার ব্যাপারে বলি।

সুজন। পড়াশোনায় ভালো ছিলো। নবম শ্রেণিতে থাকতে কোনো একটা পরীক্ষায় সে ফেইল করে। এতো ভালো ছাত্র থেকে বাবা মা এমন রেজাল্ট আশা করে নি। বাবা রাগ করে ছেলের শখের চুল কেটে দেয়( বলাবাহুল্য তার চুল,চুলের স্টাইল অনেক সুন্দর ছিলো)।  শখের চুল হারিয়ে সে খুব কষ্ট পায়। বাবা মেয়ের প্রতি রাগ হয়। আপনাকে ন্যাড়া করে দিলে আপনি স্কুলে যাবেন? খেলতে যাবেন? পড়তে যাবেন? এক প্রকার জিদ কাজ করবে না বাবা মায়ের উপর? তাও আবার পছন্দের জিনিস হারালে কষ্টটা দ্বিগুণ তিনগুণ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। সেই থেকে ছেলেটা অন্ধকার রুম, একা থাকা শুরু করেছে, কারো সাথে কথা বলে না, পড়াশোনায় মনোযোগ নেই। বাবা মা হয়তো এতে আরও ক্ষেপে যায়। নিশ্চয়ই মানসিক শারীরিক অত্যাচার করে। ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে আজ সে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। জানেন তো কত ভয়াবহ এই রোগ! এরা গায়েবি আওয়াজ শোনে। তারা নিজেরাই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করতে পারে কিংবা অন্যকেও খুন করতে পারে। সে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।

.
মেয়েটার শখ আঁকাআঁকি করা। পড়াশোনার জন্য পারিবারিক সাপোর্ট পায় নি। নিজে টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালিয়েছে। এইচএসসি তে রেজাল্ট খারাপ করায় পরিবার তাকে দেখতে পারে না। বাবা ছোট ভাইকে বলে দেন বড় হয়ে যাতে এই বোনের মতো না হয়! ও নাকি একটা অকর্মার ঢেঁকি! সারাদিন কটু কথা শুনতে শুনতে মেয়েটা বাঁচার আগ্রহ'ই হারিয়ে ফেলে। নিজেকে শূন্য, মূল্যহীন মনে হয়। নিজের গায়ে আঘাত করে, ঘুমের ওষুধ খায়, আত্নহত্যা করার চেষ্টা করে। অনেক পরিশ্রম করার পর একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে শখের সাবজেক্ট আর্ট নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছিল সবার কথার জবাব দিতে। কিন্তু ফ্যামিলি বলে, এ সাবজেক্টের ভবিষ্যৎ নেই,ক্যারিয়ার ভালো না, আরও কত কি। তাকে ভর্তি হতে দিলোই না!!!

এখন আপনারাই বলেন এইযে তিনজন মানুষের কথা শুনলেন এদের এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী? ওরা নিজেরা নাকি ফ্যামিলি মেম্বার, আশেপাশের মানুষজন?

আমাদের বাবা-মা আমাদের ভালো চান এটা আমরা সবাই মানি। আমাদের ভাই-বোন চায় তারা যেন যেকোনো জায়গায় গর্বের সাথে আমাদের পরিচয় দিতে পারে। আর এটার জন্য তারা আমাদেরকে শারীরিক মানসিকতার এতো এতো প্রেসার দিতে থাকে যে আমরা অনেক সময় সহ্য করতে পারিনা। আসলে ডিপ্রেশন কি, ছেলে মেয়েদের সাথে কীভাবে বিহেভ করতে হবে, কাউন্সিলিং করতে হবে এটা আগে আমাদের বাবা মা, ভাই বোনদের শিখানো উচিত। উনাদের ব্যার্থতার ভারও অনেক সময় আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দেন। টিনএজ ছেলে মেয়েরা ভয়ে,আতঙ্কে নিজেদের সমস্যার কথা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারে না। কারণ সে জানে পরিবারের চাই 'ডিগ্রী, চান্স, ভালো রেজাল্ট! ' সে মরে যাক কারো আপত্তি নেই কিন্তু ডিগ্রী চাই'ই চাই। এইযে দেশে এতো এতো আত্নহত্যা বাড়ছে এদের পিছনে কি পরিবারের ভূমিকা নেই? দোষ নেই?
অবশ্যই আছে। পরিবার হয়তো বুঝে না নয়তো স্বীকার করবে না।

অনেকেই ডিপ্রেশনে আছে। যে যেই কারণেই ডিপ্রেশনে থাকুক না কেন তার কাছে তার কারণ টাই মূখ্য। আমাদের উচিত তাদের সময় দেওয়া, তাদের কথা শোনা, সাহস দেওয়া, সাপোর্ট দেওয়া।

অথচ আমরা কি করি? কেউ সারাদিন একটিভ থাকলে, স্ট্যাটাস দিলে আমরা বলি সে আকাইম্মা, এটেনশন সিকার! কেউ কষ্ট শেয়ার করলে আমরা হাহা দিয়ে উড়িয়ে দেই। ব্যাপার টা পাত্তাই দেই না। একবারও ভাবি না সে কষ্ট পাচ্ছে কিনা, তার মনের অবস্থা কেমন!

যে বা যারাই ডিপ্রেশনে আছেন তারা একা রুমে বসে না থেকে ঘর থেকে বের হোন। মানুষের সাথে মিশুন। এমন একজনকে খুঁজে বের করুন যিনি আপনাকে বুঝবে। পাশে না দাঁড়ালেও এটলিস্ট আপনার কথা হেসে উড়িয়ে দিবেন না। যা করতে ইচ্ছে হয় করুন। যেটা করলে মন ভালো হয় করুন। মিম শেয়ার করে, স্ট্যাটাস দিয়ে ভালো থাকলে তাই করুন।
Don't give any importance to those who talk behind you. just kick off negative people from your life, from your friend list. Your life will become more easier.

No comments:

Post a Comment